গগ্যা ছোটবেলায় বাড়ি পালিয়ে জাহাজের খালাসী হয়েছিলেন। জাহাজে জাহাজে ঘুরে বেড়িয়েছেন নানা দেশে। ফিরে এসে ছবি আঁকা শিখলেন। ভ্যান গগের সাথে বন্ধুত্বও ছিল গগ্যার। ছোটবেলার দেখা প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলো খুব টানতো গগ্যাকে। একদিন হঠাৎ বাক্স পেটরা গুছিয়ে তাহিতির জাহাজে উঠে বসলেন। তাহিতিতে তাহিতিবাসির অজস্র ছবি আঁকলেন। তাহিতির আলো, নিজস্ব আকার পদ্ধতি আর এনলাইটেনমেন্টের মন দিয়ে গগ্যা এক নতুন ধরণের ছবি উপহার দিলেন পৃথিবীবাসীকে। প্রচলিত ফর্মকে, রঙের ব্যবহারকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেলেন গগ্যা।
গগ্যার এই ছবিটার নাম নেভারমোর, মানে “আর কোনদিন নয়”। এই ছবিতার রস আস্বাদন করতে হলে একটু কবিতার খোঁজ নিতে হবে। এডগার এলেন পোর একটা কবিতা আছে র্যাভেন নামে, মানে দাঁড়কাক। সেই কবিতায় এক হতাশ বিষন্ন, প্রেম প্রত্যাখাত মানুষের ঘরে এক দাঁড়কাক ঢুকে পরে। সেই দাঁড়কাক উড়ে গিয়ে বসে তার দরজার উপরে থাকে এথেনা মুর্তির উপরে। এই এথেনা হচ্ছে প্রজ্ঞার বা উইশডমের দেবী। লোকটি আবিস্কার করে দাঁড়কাক কথা বলতে পারে। লোকটি যাই জিজ্ঞেস করে দাঁড়কাক উত্তর দেয় “নেভারমোর”। এই একটা কথাই দাঁড়কাক শিখেছে। গগ্যার ছবির নামও নেভারমোর। ছবিতে দাঁড়কাককেও নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন।
ছবিতে এক তাহিতিবাসিনি নগ্নিকা শুয়ে আছে। ইউরোপের রেনেসাঁ অন্য ন্যুড ছবির মধ্যে ছিল শরীরের আবেদন, আর শরীরের মাধুর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা। এই ছবিতে শরীর মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে মুখ আর মাথা। মুখ আর মাথা অস্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল। মাথার নিচের উজ্জ্বল হলুদ রঙের বালিশ মুখের উজ্জলতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তাহিতিবাসিনির মুখ দেখলে বোঝা যায় সে গভীরভাবে চিন্তামগ্ন। এইটাই ইউরোপের "থিংকিং সেলফ"। হেগেল আর কান্ট ঘুরে যারা সবকিছুর উপরে বুদ্ধির সর্দারি মেনে নিয়েছে। সেনসুয়াল বা ইন্দ্রিয়পরায়ণ কর্মকাণ্ডের যাদের কাছে কোন মুল্য নেই। এরা একটা বিষয়ই শিখেছে যুক্তি, যুক্তি আর যুক্তি, তারা সেই এডগার এলেন পোয়ের দাঁড়কাকের মতো যে শিখেছে এক্টাই শব্দ “নেভারমোর”। সবকিছুর জবাবে একটাই শব্দ।
এনলাইটেনমেন্টের আর মডার্নিজমের আরেক শৈল্পিক ক্রিটিক গগ্যা করলেন তার অসমান্য মেধা আর শিল্পবোধ দিয়ে।
আগের লেখার লিংকঃ http://bit.ly/2nbwGGw
৩/১৯, ব্লক-বি, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা