শীর্ষেন্দুর দূরবীন

শেখ কান্তা রেজা

হেমকান্ত, রঙ্গময়ী, কৃষ্ণকান্ত, ধ্রুব আর রেমি- দূরবীনে চোখ রেখেছে এই ক'টি মূল চরিত্র, বাকিগুলো দোহারের মত সঙ্গত দিয়েছে পুরো কাহিনী জুড়ে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর "দূরবীন" উপন্যাসে তিনটি প্রজন্মকে তুলে এনেছেন এক মলাটে।

প্রৌঢ় হেমকান্তের মনঃসঙ্গিনী রঙ্গময়ী কিংবা মনু। বিপত্নীক হেমকান্ত এবং তার পুরো পরিবারের দায়িত্বকে মাথায় নিয়ে অবিবাহিতা পুরোহিত কন্যা রঙ্গময়ী প্রবল ব্যক্তিত্বের সাথে গোটা সংসার চালাচ্ছেন। ‌ হেমকান্তের কনিষ্ঠপুত্র কৃষ্ণ, কৃষ্ণকান্ত। ছোটকাকা স্বদেশী করতেন বলে কৃষ্ণকান্তের রক্তেও কিছুটা সেই লাভা দেখা যায় ছোট বয়স থেকেই। এককালের ব্রহ্মাচার পালন এবং পরবর্তীতে ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা কৃষ্ণকান্ত উপন্যাসের মধ্যাংশ অলঙ্কৃত করে রেখেছেন।

কৃষ্ণকান্তের পুত্র ধ্রুব, দিগভ্রষ্ট, পিতৃবিদ্রোহী উদ্ধত যুবক। পিতার প্রতি চরম আক্রোশ তার, রাজনীতিবিদ পিতার মধ্যে সে খুঁজে পায় না সেই ব্রহ্মচারী, দেশের জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণসত্তাটিকে। ধ্রুবর স্ত্রী রেমি, স্বামীকে অসম্ভব ভালবাসে, শত দুর্নাম সত্ত্বেও শ্বশুরকে প্রাণ দিয়ে শ্রদ্ধা করে সে। ধ্রুবর চরম অবহেলা, কালে-ভদ্রের ভালবাসাকে অবলম্বন করে কাটে তার রোজকার দিন।

হেমকান্ত-রঙ্গময়ী দিয়ে শুরু হয়ে একেক অংশে একেক প্রজন্মকে তুলে এনেছেন লেখক। অত্যন্ত সাবলীলভাবে বর্ণনা করে গেছেন সেই সময় এবং বিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক ও সামাজিত প্রেক্ষাপট।

হেমকান্তের পুত্রবধূর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, তার কন্যার বিরাগ, কৃষ্ণের বড় হয়ে ওঠা, রঙ্গময়ীর কর্তৃত্ব এবং অপমানিত হওয়া- সবই উঠে এসেছে। সমান্তরালে বিংশ শতাব্দীর রেমি-ধ্রুবর সম্পর্কের টানাপোড়েন, ধ্রুব'র "ধরব ধরব করছি কিন্তু ধরছি না" মাপের ভালবাসা কিংবা অবহেলা, রেমিকে অন্য পুরুষের সংস্পর্শ নেবার প্রচেষ্টা, সন্তানসম্ভবা রেমির মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে আবার বেঁচে ফেরা! দারুণ নাটকীয়, পরের অংশের বিবরণ আন্দাজ করে রোমাঞ্চিত হবার একটি বিষয় কাজ করেছে গোটা উপন্যাস জুড়ে। কেমন দূর থেকে আমরা জড়িয়ে যাই কাহিনীর ভিতরে। দূরবীন নামকরণের সার্থকতা হয়ত এখানেই।

kanta

শেখ কান্তা রেজা

শেখ কান্তা রেজা, পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার এক গ্রাম থেকে উঠে আসা কান্তা সর্বভূক পাঠক পরিচয়ে স্বচ্ছন্দ। অনলাইনে লেখালেখি, গান, কবিতা, বই - এসব নিয়েই কান্তা।

সম্পাদক: আবু মুস্তাফিজ

৩/১৯, ব্লক-বি, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা