ক্ষমতা আর পুরুষতন্ত্র এর কারণ

স্টাফ রিপোর্টার, দুরবিন ডটকম

গাজিপুরে পালিত মেয়েকে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন হজরত মাহমুদ। এই খবরে তোলপাড় তৈরি হয়েছে। কেউ বলেছেন, দেশের বিচার ব্যবস্থা কেবল ক্ষমতাবানদের জন্যে, কারুর বক্তব্য আত্মহত্যা শেষ সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফর্মেন্স স্টাডিজের ফারজিয়া হক ফারিন বলছিলেন, “এই খবর দেখে কী মনে করবো আবার... প্রত্যেকবারের মত আঙুল চুষছি। অপেক্ষা করছি আরেকটা ধর্ষণ, আরেকতা আত্মহত্যার।

এসব হচ্ছে কারণ সাধারণ মানুষ যাদের কাছে বিচার চাইবে, তারা সব টাকার গোলাম। বিচার হয় না... তাই ধর্ষণ হয় অবাধে। ধর্ষক জানে শাস্তি হবে না। অবস্থা কেমন হলে একজন বাবা তার মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে! আমি ভাবতেও পারি না। আর মেয়েদেরকে এই সমাজ কখনো মানুষ ভাবতে পারবে না। হোক শিশু, কিশোরী বা যুবতী, মেয়ে মানেই একদলা মাংসপিণ্ড, যাকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেতে হবে

আসলে এখন আমার আর রাগও হয় না। নিষ্ফল ক্রোধ দেখিয়ে কী করবো? তাই আঙুল চুষি

এর কারণ এই সমাজ। পুরুষতান্ত্রিকতা, ক্ষমতাবানদের আধিপত্য, দুর্নীতি।

নারীবাদ নয়, আমি মানুষবাদ চাই। আমি চাই আমাকে কেউ লোভনীয় মাংসের টুকরা না ভাবুক। ভিড়ে বা অন্ধকারে কেউ আমার শরীরে হাত দিবে না এইটুকু নিশ্চয়তা তো চাইতেই পারি”?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের হাসান তানভির বলছিলেন, “একটা মানুষ আত্মহত্যা কখন করে, যখন পৃথিবীর উপর চরম ক্ষোভ তৈরি হয় তখন। যখন বেঁচে থাকাটা তার কাছে মূল্যহীন মনে হয়। সম্প্রতি যে বাবা মেয়ে রেল লাইনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে, তাদের কাছেও এই বিষাক্ত সমাজে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো মনে হয়েছে। সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে অসহায়। এরা যা করে তাই সাধারণ মানুষদের মেনে নিতে হয়। এদের উপেক্ষা করে থানায় গেলে গ্রামে একঘরে করে রাখা হয়। প্রশাসন যদি এই আঞ্চলিক সালিশি ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে এরকম ঘটনা আরো ঘটতে থাকবে। আমরা মনে করি এটা আআত্মহত্যা নয়। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই”।

ঢাবির সাংবাদিকতার ছাত্র ধ্রুব ভিন্ন সুরে বললেন, “যথাযথ ব্যবস্থাও ঠিক মত নিতে পারেন নাই। অভিযোগ করেছেনন।  ইউনিয়ন পরষদের চেয়ারম্যান পর্যন্ত গিয়ে থেমে গেছে। এই যুগে সংবাদপত্রের কাছে পৌঁছানো কঠিন কিছু না। মরসেন তো মরসেন মেয়েটাকেও নিয়ে মরসেন। উনি স্রেফ লজ্জা ঢাকার জন্য এই কাজ করসেন। মরবেনই যখন উত্ত্যক্তকারীটাকেই মারতেন! এলাকাভিত্তিক দুঃশাসন সব যুগেই ছিল, সব যুগেই থাকবে। অসহায়ত্ব সবারই কমবেশি আছে। কিন্তু এইরকম হাল ছেড়ে দিয়ে নির্বোধের মতো কাজ করে কোন সমাধান আসে না”।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ঘন্টা/২মে, ২০১৭/এইচএএম/দুরবিন ডটকম


সম্পাদক: আবু মুস্তাফিজ

৩/১৯, ব্লক-বি, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা