ব্লাড ডায়মন্ড; মানবিকতা ও ভালোবাসার গল্প।

কিরো আদনান আহমেদ

“Sometimes I wonder, will God ever forgive us for what we've done to each other?

 Then I look around and I realize, God left this place a long time ago.

সময়টা ১৯৯৯। স্থান পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিয়ন। অন্ধকার রাজ্যের এক কোণে পরিবার নিয়ে বসবাস করা সলোমনকে (জিমন হনসো) নিয়ে আমাদের কাহিনী। যখন নিভৃতে ছেলেকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখছে সলোমন তখনই দেশে নেমে আসে গৃহযুদ্ধ। আরইউএফ বিদ্রোহীদের নৈরাজ্য চলতে থাকে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। রাস্তায় রাস্তায় চলতে থাকে খুন, জখম। মানুষকে নির্বিবাদে ধরে নিয়ে যায় বিদ্রোহীরা। বাচ্চাদের ব্রেনওয়াশ করে চিল্ড্রেনস্‌ আর্মিতে যোগ দেওয়ানো হয়, যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় হীরার খনির শ্রমিক হিসেবে। সলোমনের পরিবারেও নেমে আসে দুর্দশা। পরিবারের বাকিরা বিদ্রোহীদের হাত থেকে বেঁচে গেলেও ধরা পড়ে সলোমন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় খনিতে। সেখানে একটি গোলাপি হীরা লুকোতে গিয়ে বিদ্রোহী ক্যাপ্টেনের কাছে ধরা পড়ে সলোমন। কিন্তু ওই মুহূর্তেই সরকারি সৈন্য বাহিনী খনিতে হামলা করে, সলোমন সরকারি সৈন্য বাহিনীর হাতে বন্দি হয়। বন্দি হওয়ার আগেই কোনভাবে হীরাটি মাটিতে পুঁতে রাখে সলোমন।

এই হীরার যোগসুত্রেই দৃশ্যপটে আসে রিচার্ড আর্চার (লিউনার্দো ডি ক্যাপ্রিও)। একজন স্মাগলার, আরইউএফ এর সাথে অস্ত্রের বিনিময়ে হীরার লেনদেন করা আর্চারের নজর যায় সলোমনের দিকে। সেই পিঙ্ক ডায়মন্ডটির ব্যবস্থা করে দিতে পারলে সলোমনকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আর্চার। এই প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে যুক্ত হয় আরেক আমেরিকান সাংবাদিক ম্যাডি বয়েন (জেনিফার কনেলি) । এরপর কাহিনী এগোতে থাকে, আফ্রিকার বিচিত্র প্রান্তরে, বিচিত্র ভঙ্গিমায়। সলোমন কি তার পরিবারকে ফিরে পাবে, ডায়মন্ডটি কি আর্চারের হাতে আসবে, ডায়মন্ড চোরাচালানের পেছনের সিন্ডিকেটকে কি ম্যাডি খুঁজে পাবে, জানতে হলে আপনাকে পুরো মুভিটা দেখতে হবে।

কিছু সিনেমা দেখার পর তা নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগে। ভালো লাগার রেশটা থেকে যায় অনেকক্ষণ। ব্লাড ডায়মন্ড ওইরকম একটি সিনেমা। স্টোরি গড়ে উঠেছে মূলত ডি ক্যাপ্রিও এবং জিমন হনসোকে কেন্দ্র করে। তাদের দু'জনের অভিনয়ই মনে দাগ কাটার মতো। ডিক্যাপ্রিওর রোডেশিয়ান একসেন্ট কিংবা হনসোর আকস্মিক ক্রোধ সবকিছুই পরিপূর্ণতা দিয়েছে মুভিটিকে। জেনিফার কনেলির চরিত্রটি ছোট হলেও তার উপস্থিতি মুভিটিতে অন্যরকম এক প্রাণের সঞ্চার করেছে।

এডওয়ার্ড জুইকের ডিরেক্টিংও ছিল মনে রাখার মতো। রাস্তার মাঝখানে আকস্মিক বিদ্রোহী আর সরকারি আর্মির গুলাগুলি, আর এই যুদ্ধ টাইপ পরিস্থিতে ডিক্যাপ্রিও ও হনসোর দৌড়াদৌড়ির সিনটা এককথায় একটি মাস্টারওয়ার্ক। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, ক্যামেরার কাজও যথেষ্ট ভাল। মুভির প্রথম অর্ধেকে চরিত্রগুলোকে গুছিয়ে আনা হয়েছ। যদিও হনসোই মুভির প্রধান চরিত্র, কিন্তু সবার আকর্ষণ ধরে রেখেছে ডিকেপ্রিওর স্বার্থপর, আত্মকেদ্রিক চরিত্রটি। দ্বিতীয় অর্ধেকে মূলত চরিত্রগুলোর মধ্যকার টানাপোড়েন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সিনেমার শীর্ষমুহূর্ত নিঃসন্দেহে ডিক্যাপ্রিওর শেষ ফোনকলটি। আপনি না চাইলেও দেখবেন, চোখের কোনায় জল জমেছে।

পাঁচটি বিভাগে অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিল সিনেমাটি। ডিক্যাপ্রিও ও হনসো দুইজনই নমিনেশন পেয়েছিলেন সেরা অভিনেতা এবং সেরা পার্শ্ব অভিনেতার জন্য।

শেষমেশ বলতে হয়, ব্লাড ডায়মন্ড একটি অবশ্য দ্রষ্টব্য সিনেমা। সিনেমাপ্রেমী প্রায় সবার-ই দেখে ফেলবার কথা।

এখনও যারা দেখেননি, দেখে ফেলুন শিগগির।

লেখকঃ ছাত্র, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক: আবু মুস্তাফিজ

৩/১৯, ব্লক-বি, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা