কলড্রপ বেড়েছে গ্রামীণফোনের

ডেস্ক রিপোর্ট, দুরবিন ডটকম  

টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী সিগভে ব্রেকের কাছে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত  কলড্রপ নিয়ে নালিশ করার পরে কমার পরিবর্তে ১১ দিনে কলড্রপ উলটো বেড়েছে।

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে এক সম্মেলনে গ্রামীণফোনের মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী সিগভে ব্রেকের কাছে গ্রামীণফোনের কলড্রপ নিয়ে নালিশ করেছিলেন। সবাই প্রত্যাশা করেছিলেন এই নালিশের পর গ্রামীণফোন সতর্ক হবে, তাদের নেটওয়ার্কে কলড্রপ কমে আসবে। বাস্তবতা হলো, অর্থমন্ত্রীর এই নালিশকে কোনো তোয়াক্কাই করেনি গ্রামীণফোন। কলড্রপ কমাতে উদ্যোগও নেয়নি তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উল্টো এই ১১ দিনে কলড্রপ বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক চলাকালে টেলিনর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। বৈঠক শেষে মুহিত বাংলাদেশি একজন সাংবাদিককে বলেন, ‘টেলিনর প্রেসিডেন্টকে আমি বলেছি, তোমাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ প্রত্যেকবার একটা, এতো কলড্রপ হয় কেন?’ অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেছেন, আমরা তাদের যে স্পেকট্রাম দিয়েছি সেটা সাফিসিয়েন্ট নয়। তিনি বললেন, আমাদের স্পেকটাম ডিভাইডেড টু পার্ট। একটি হচ্ছে- ডেটা এবং অপরটি টেলিফোন (ভয়েস)। ডেটাতে অনেক আনইউজড ক্যাপাসিটি আছে। কিন্তু টেলিফোনে নেই। সে কারণেই এই কলড্রপ সমস্যা। কলড্রপ সমস্যা নিরসনে আরো স্পেকট্রাম চেয়েছেন টেলিনর প্রেসিডেন্ট।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নামে থ্রি জি হয়েছে বলা হলেও আসলে আমরা কিন্তু টু জিতেই আছি। এখন আমাদের ফোর জিতে যেতে হবে। টেলিনর প্রেসিডেন্টও সেই গুরুত্বই দিয়েছেন।’ ফোর জির নিলামের বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেটের পর অকশন ডাকা হবে। পাঁচ কোটির বেশি গ্রাহকের অপারেটর গ্রামীণফোনের কলড্রপের বিষয়টি এর আগেও আলোচনায় এসেছে। প্রতিটি ভয়েস কলড্রপের জন্য এক মিনিট ক্ষতিপূরণের ঘোষণাও দিয়েছিল তারা। গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে ওই ‘অফার’ চালুর কথা ফলাও করে প্রচার করলেও ‘গ্রাহকদের না জানিয়েই’ কয়েকদিনের মধ্যে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনার কারণে নতুন করে কল ফেরত দিচ্ছে অপারেটররা। কিন্তু কাকে কি পরিমাণ কল ফেরত দেওয়া হচ্ছে তা গ্রাহক বুঝতে পারছে না।

সর্বশেষ এক হিসেবে দেখা গেছে, কলড্রপের ক্ষেত্রে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। বিটিআরসির তৈরি একটি প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের পৃথক ও গড় হিসাব দেওয়া হয়েছে।

তিন মাসের গড় হিসাবে দেখা গেছে, গ্রামীণফোনের কলড্রপ হয়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ১২ হাজার, রবির হয়েছে ৫ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার, বাংলালিংকের ৩ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার এবং টেলিটকের ৬২ লাখ ২৭ হাজার।      প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ক্ষতিপূরণ তথা কল ফেরতের (মিনিট) বেলায় গ্রামীণফোন দিয়েছে মাত্র ৩৭ শতাংশ, রবি দিয়েছে ২০ শতাংশ। বাংলালিংক কল ফেরত দিয়েছে ১১৪ শতাংশ। আর রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের কলড্রপ হলেও এই সময়ে অপারেটরটি গ্রাহককে কোনো কল মিনিট ফেরত দেয়নি।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘অপারেটররা যে কল ফেরত দিচ্ছে এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে আমরা মনে করি। তা হচ্ছে শুধুমাত্র নিজস্ব নেটওয়ার্ককে (অন নেট) কেটে নেওয়া কলের জন্যই গ্রাহকদের এই ক্ষতিপূরণ। অফ নেটের জন্য নয় বা অন্য অপারেটরের জন্য নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘কলড্রপের ক্ষতিপূরণ দেবার কথা বলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। ওই সময়ে একটি অপারেটর সাময়িকভাবে কিছু কল মিনিট ফেরত দিলেও ২০১৫ সাল থেকে সব অপারেটরই তা বন্ধ করে দেয়। গত বছর এ নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেন-দরবার, লেখালেখি ও গণমাধ্যম সোচ্চার হলে বিটিআরসির কলড্রপ ফেরত প্রদান বাধ্যতামূলক করে। কিন্তু এ জরিমানা আদায় বা স্বচ্ছতা বিটিআরসি নিশ্চিত করতে না পারায় গ্রাহকরা প্রকৃতপক্ষে কোনো সুফলই পাচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কলড্রপ যদিও আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত এবং তার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অপারেটররা এ সকল নিয়ম-কানুন না মেনে নিজেদের ইচ্ছেমতো কলড্রপ করে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এর অন্যতম কারণ কি পরিমাণ কলড্রপ হচ্ছে বা নেটওয়ার্ক ভেঙে যাচ্ছে তার পরিমাপ করার কোনো সক্ষমতাই বিটিআরসির নেই। তারা অপারেটরদের পরিসংখ্যান থেকেই হিসাব করে থাকে। অর্থাত্ যে অপরাধী তাকেই বিচার করতে দেওয়া হলো।

বাংলাদেশ সময় : ১৩০৮ ঘণ্টা /০৩ মে, ২০১৭/ওআউ/দুরবিন ডটকম।   


সম্পাদক: আবু মুস্তাফিজ

৩/১৯, ব্লক-বি, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা