এমন কেন!

শেখ কান্তা রেজা

অমুকের অশ্লীল ভিডিও বেরিয়েছে, সেটা তার চেহারা কি না তাই খতিয়ে দেখতে দেশের অর্ধেকের বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আবার মাথায় উঠিয়ে ফেলছে।
অবশ্যই, একজন নিরপরাধ সেলিব্রেটির এভাবে হেনস্থা হওয়া মানায় না।

কিন্তু আয়েশার ধর্ষিত হওয়াটা আসলে তার প্রাপ্য, ও তো সেলিব্রেটি নয়। তাই ওর আত্মসম্মানও থাকতে নেই। অত্যন্ত সত্য কথা।

শাকিব খানের বউ হিসেবে অপু বিশ্বাস নিজেকে দাবী করলেন এবং প্রমাণস্বরূপ তাদের ছেলেকে আনলেন, তারপর তাই নিয়ে মিডিয়া উত্তাল হলো, তারপর ঠান্ডা হয়ে গেল। তারপর আবার শাকিব খানকে পরিচালক সমিতি নিষিদ্ধ করলো, এখন আবার মিডিয়া উত্তাল।

ভাই রমেল, তোর মৃত্যুতে আঁচই নেই, তাপ তো দূরের কথা। মরে গিয়েও মিডিয়া গরম করতে পারলি না। অবশ্য তুই তো বাঙালি নস, বাংলাদেশিও নস, তোর প্রাপ্য তো এটাই।

যশোর রোডের গাছগুলো কাটা পড়ছে, এগিয়ে এসেছেন সাহানা বাজপেয়ী, আমরা শুধু খবরে জানছি, কারণ ওটা তো ভারতের, ওর সাথে আমাদের সম্পর্ক কী?
কাশেম বিন আবুবাকার বরং ক্ষমতা রাখেন আমাদের মাথাকে ঘামিয়ে দেবার। আলোচিত লেখক বলে কথা।

শাকিব খান কি একটা দিন পারে না রমেলের মৃত্যু নিয়ে বিচার দাবী করতে?

না পারে না, কারণ সে ক্যামেরার সামনে লাফালাফি, মুঠোফোনে চ্যানেলগুলোতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজেকে বাংলাদেশের একমাত্র সুপারস্টার বলা ছাড়া কিছুই পারে না।

পরিমণি কোন সিনেমায় কয়টা আইটেম সং করলো তা নিয়ে না ভেবে ফিল্ম ক্রিটিকরা একটা দিন ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন না, কারণ তারা বিনোদন সংক্রান্ত মিডিয়ার লোক, তাদের এসব খবরে কান দিলে চলবে কেন????

আচ্ছা, একটা কাজ করা যাক, ক্যাটেগরি করে ফেলা যাক। জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশনের মতন, লেভেল অনুযায়ী সাজানো হোক মানুষদেরকে। তাহলে যেখানে যা দরকার সেটা হবে। আবার আমাদের এই স্ট্যাটাসগুলো দেওয়া লাগবে না।

সুনামগঞ্জের ঘটনা নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে সবার পাশে থাকতে চান। ভাল কথা, দেশের মাথাগুলো তখন কেন বললেন না "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অমুক মেয়েটা শরীর সম্পর্কে জানার আগেই শরীর খুইয়ে বাপসহ জীবনটা হারালো, চলুন তার মায়ের পাশে গিয়ে একটু বসবেন!"

আমরা পারি না, কারণ ওসব আমাদের ভাবার দরকার না। আমরা নিতান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হলে থাকা সিজিপিএ খোঁজা ছাত্রছাত্রী।

আমরা এসব সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে আমাদের শিক্ষকরাই আটকাবেন, কারণ যদি আমার কথা কারো বিপক্ষে যায় তাহলে তাদের দিকে আঙুল উঠবে "অমুক ডিপার্টমেন্ট এর অমুক এটা করেছে, আপনি না ওখানকার শিক্ষক? ছাত্রদের বোঝান, থামতে বলেন!"

এই ভয়ে তারাও নিরপেক্ষ থাকতে চান। যদি নিতান্তই জেদ করা হয়, তাহলে "নিজ দায়িত্বে করো" বলে শেষ।

উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিশাল মাতামাতি আমাদের, কেউ দাঁড়িয়ে গেলে তাকে শিখর ছাড়িয়ে দু'ইঞ্চি উপরে তোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গ্রামের যে ছেলেটা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে তার সমাজের মানুষগুলোর পাশে থাকতে তাকে নিয়ে ভাবে ক'জন?

মাঝেমাঝে সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে, সব!

ইচ্ছে করে মন্ত্রীপরিষদের টেবিল থাবড়ে জিজ্ঞেস করি "গায়ের চামড়াটা কত দিয়ে বিক্রি করেছেন?"

ইচ্ছে করে তথাকথিত যুব সমাজের পরিবর্তকদের কলার ধরে জিজ্ঞেস করি "টাকা ছাড়া আর কী চেনো তুমি?"

ইচ্ছে করে তথাকথিত পক্ষপাতদুষ্ট লেখকদের কলমের নিব ওদের গলায় ধরে বলি, "এখন সময় আছে, ভাল হয়ে যা!"

ইচ্ছে করে নিজেকে আছড়ে ফেলি, পরিবারের সব সদস্যদের একবার করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাই তারা এখনো কুয়োর ব্যাঙ হয়েই আছে, মুখে যতই প্রগতির বুলি আউড়াক না কেন!

kanta

শেখ কান্তা রেজা

শেখ কান্তা রেজা, পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার এক গ্রাম থেকে উঠে আসা কান্তা সর্বভূক পাঠক পরিচয়ে স্বচ্ছন্দ। অনলাইনে লেখালেখি, গান, কবিতা, বই - এসব নিয়েই কান্তা।

সম্পাদক: আবু মুস্তাফিজ

৩/১৯, ব্লক-বি, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা