১. সহিংসতা সমাজের একটি অতি স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হচ্ছে। সহিংসতার যে সব চিত্র এবং ভিডিও পাওয়া যায় তা দেখে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা এক কথায় অসম্ভব। সহিংসতার এসব চিত্র/ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষের বিবেচনাবোধ সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে। লাঠি হাতে, বাঁশ হাতে, ধারালো অস্ত্র হাতে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ছে আরেক মানুষের ওপর। যারা এই উন্মত্ততায় অংশ নেন, দেখা যায় তারা নিজেরাও খুবই সাধারণ মানুষ। স্রেফ হুজুগের বশে তারা ঝাপিয়ে পড়েন প্রতিপক্ষের ওপর। নৃশংসভাবে আঘাত করতে থাকেন, উল্লাসে মেতে ওঠেন। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বেমালুম খুন করে বসেন আরেক মানুষকে!
সমাজের মধ্যে ক্রমাগত গেড়ে বসা এই সহিংসতা মানুষের মনুষ্য পরিচয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে। ভেঙে পড়ছে সমাজ, সমাজের ভবিষ্যৎ। অনেকেই বলে থাকেন, আইনের শাসন না থাকায় মানুষ হিংস্র হয়ে উঠছে। কথাটা হয়তো ঠিক। প্রশ্ন হলো, যে আক্রোশ নিয়ে মানুষ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সেই আক্রোশ কই থাকে? পরিস্থিতির বিচারে এমন সিদ্ধান্ত বোধ করি খুব বেঠিক হবে না, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মত শর্ত এবং যোগ্যতা আমরা হারাচ্ছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেয়ে উন্মাদের মত আত্মঘাতী কোপাকুপিতেই আমাদের উৎসাহ বেশি।সময়ের পালাবদলে আক্রমণকারী এবং আক্রান্তের অবস্থান পরিবর্তনও যেন নিয়তির পরিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২. একটা জনপদ, জনগোষ্ঠী, সভ্যতা সাসটেইন করার কিছু অত্যাবশ্যকীয় শর্ত থাকে। যে সভ্যতায় সব অবজার্ভ করার মত বৈষয়িক, জ্ঞান এবং মর্মগত শর্ত থাকে না সে সভ্যতার বিনাশ অনিবার্য। সভ্যতার ধারাবাহিকতা এবং বিকাশের জন্য সারপ্লাস বা উদ্বৃত্ত থাকা প্রয়োজনীয় শর্ত। সারপ্লাসের অর্থ এখানে ব্যাপক। বৈষয়িক, জ্ঞান এবং মরমগত উদ্বৃত্ত এবং পরমতসহিষ্ণুতা অর্থে সারপ্লাস বোঝানো হয়েছে। সেই সাথে জ্ঞান এবং মরমী চর্চার জন্য উদ্বৃত্ত সময় অর্থাৎ অবসর এবং বৈষয়িক অবস্থার দরকার হয় সভ্যতার বিকাশ এবং ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য।
৩. উল্লিখিত শর্তগুলো আমাদের সমাজে প্রবলভাবে অনুপস্থিত। বিপরীতে অসহিষ্ণুতা, হিংস্রতা, জাহেলিপনা গ্রাস করেছে আমাদের সমাজকে। এর পরিণতি কারো জন্যই সুখকর হবে না। আমাদের হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে গেছে, জ্ঞানের তৃষ্ণা আমাদের তৃষ্ণার্ত করে না। আমাদের মরম থেকে সমগ্র উধাও হয়ে যাচ্ছে। এখন খন্ডিত সত্তা নিয়ে মানবিক ভবিষ্যতের ছবি আঁকা দূর কল্পনা মাত্র।
৩/১৯, ব্লক-বি, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা